
বাংলাদেশে ব্যবসা করতে কি অনুমোদন লাগবে?
ট্রেড লাইসেন্স থেকে মার্চেন্ট একাউন্ট পর্যন্ত এক নজরে
আজকাল অনেকেই ফেসবুক, অনলাইন বা লোকাল মার্কেটপ্লেসে ছোট ছোট ব্যবসা শুরু করছেন। কিন্তু অধিকাংশ উদ্যোক্তা জানেন না – শুধু পণ্য বিক্রি করলেই ব্যবসা হয় না, তার জন্য কিছু আইনি অনুমোদন ও সরকারি নথিপত্রও দরকার।
এই ব্লগে আমরা সহজভাবে জানবো:
- ব্যবসার জন্য কী কী অনুমোদন লাগে
- ট্রেড লাইসেন্স কোথায় এবং কিভাবে করবেন
- বিকাশ/নগদ মার্চেন্ট একাউন্ট
- ট্যাক্স ও TIN
- সহায়ক কিছু ওয়েবসাইট ও সার্ভিস
১. ট্রেড লাইসেন্স – ব্যবসার প্রথম অনুমোদন
ট্রেড লাইসেন্স হলো সরকার থেকে দেওয়া একটি নথি, যা আপনার ব্যবসাকে বৈধভাবে পরিচালনার স্বীকৃতি দেয়।
কেন লাগে?
- ব্যবসাকে অফিসিয়াল করার জন্য
- মার্চেন্ট একাউন্ট খোলার জন্য
- করপোরেট ক্লায়েন্টের সাথে কাজ করার জন্য
- ভবিষ্যতে ব্যাংক লোন, বিনিয়োগ, বা সরকারি সহায়তা পেতে
কিভাবে ট্রেড লাইসেন্স করবেন?
এটি নির্ভর করে আপনি কোথায় থাকেন তার উপর। ঢাকায় থাকলে সিটি কর্পোরেশন, উপজেলা/পৌর এলাকায় থাকলে পৌরসভা বা ইউনিয়ন পরিষদ।
অনলাইনে কোথায় করবেন?
১. ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (DSCC):
- ওয়েবসাইট: https://www.dscc.gov.bd
- সরাসরি ট্রেড লাইসেন্স আবেদন:
👉 https://trade.license.dscc.gov.bd/
২. ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (DNCC):
- ওয়েবসাইট: https://dncc.gov.bd
- ট্রেড লাইসেন্স সেবা:
👉 https://etrade.dncc.gov.bd/
৩. চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন:
- ওয়েবসাইট: https://www.ccc.org.bd
- সরাসরি অফিসে গিয়ে করতে হয়
কী কী লাগবে:
- জাতীয় পরিচয়পত্র (NID)
- ২ কপি পাসপোর্ট সাইজ ছবি
- ঠিকানার প্রমাণ (বিদ্যুৎ বিল বা ভাড়া চুক্তিপত্র)
- ব্যবসার ধরণ (যেমন: গার্মেন্টস, অনলাইন দোকান)
- নাম ও মোবাইল নম্বর
- ফি: ৳৫০০–৳২০০০ (ব্যবসা ও এলাকাভেদে)
📌 সময়: ৩–৫ কর্মদিবসে লাইসেন্স পাওয়া যায়
২. মার্চেন্ট একাউন্ট – লেনদেনের সুবিধা
ব্যবসার জন্য আলাদা বিকাশ বা নগদ মার্চেন্ট একাউন্ট থাকলে কাস্টমারের কাছ থেকে পেমেন্ট নেওয়া সহজ হয়।
বিকাশ মার্চেন্ট একাউন্ট খুলতে যা লাগে:
- ট্রেড লাইসেন্স (অনেক সময় ছাড়াও মেলে)
- জাতীয় পরিচয়পত্র
- ব্যবসায়িক মোবাইল নম্বর
- বিকাশ অ্যাপ বা প্রতিনিধি অফিসে গিয়ে আবেদন
📌 নগদ মার্চেন্ট একাউন্টেও একই নিয়ম।
সুবিধা:
- ব্র্যান্ডেড নাম দেখায়
- মাসিক লেনদেন রিপোর্ট
- বড় ট্রানজেকশনের সুবিধা
- কাস্টমারের উপর বিশ্বাস বাড়ে
৩. কর ও TIN – ট্যাক্স রেজিস্ট্রেশন
আপনি ছোট ব্যবসায়ী হলেও, TIN (Tax Identification Number) থাকলে অনেক দরকারি কাজে কাজে আসে:
কিভাবে পাবেন?
- একদম ফ্রিতে পাবেন https://www.incometax.gov.bd সাইটে গিয়ে
- নিজের নামে রেজিস্ট্রেশন করে ফর্ম পূরণ করলেই হবে
📌 বার্ষিক আয় যদি ৩ লাখ টাকার বেশি হয়, তখন আয়কর দিতে হয়। তবে TIN থাকলে ব্যবসা আরও পেশাদার হয়।
অতিরিক্ত সহায়ক সার্ভিস কোম্পানি
আপনি যদি নিজে ফর্ম পূরণ বা আবেদন করতে না চান, তাহলে নিচের অনলাইন কোম্পানিগুলো সাহায্য করতে পারে:
১. Priyo Business
- ট্রেড লাইসেন্স, TIN, VAT, একাউন্টিং ইত্যাদি
২. TaxSheba
- TIN, ট্রেড লাইসেন্স, ট্যাক্স ফাইলিং
৩. Kormo Legal
- SME এবং ছোট ব্যবসার জন্য কনসালটেন্সি
সংক্ষেপে কি কি লাগবে?
বিষয় |
প্রয়োজন |
ট্রেড লাইসেন্স |
ব্যবসা বৈধভাবে পরিচালনার অনুমোদন |
TIN |
ফ্রিতে করা যায়, ভবিষ্যতের জন্য দরকারি |
মার্চেন্ট একাউন্ট |
পেমেন্ট নিতে ও ট্রানজেকশন ট্র্যাক করতে |
NID, ছবি, ঠিকানার প্রমাণ |
সব জায়গায় লাগে |
আপনার ব্যবসা ছোট হোক বা বড়, লিগ্যাল অনুমোদন ছাড়া তা দীর্ঘমেয়াদে টিকিয়ে রাখা কঠিন।
আজই ট্রেড লাইসেন্স করুন, মার্চেন্ট একাউন্ট খুলুন, আর TIN সংগ্রহ করুন – এতে করে আপনার ব্যবসা আরও পেশাদার হবে, গ্রাহকের আস্থা বাড়বে, এবং ভবিষ্যতে ব্যাংক বা সরকারের সহযোগিতাও পাবেন।